প্রথম শ্রেণীর গড় আর আমাদের টেস্ট একাদশ
একজন ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষায় কেমন ফলাফল করবে সেটার একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায় টেস্ট পরীক্ষার ফলাফলে। তেমনি টেস্ট ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড় কেমন করতে পারে সেটা তার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের গড় দেখলেই অনেকটা অনুমান করা সম্ভব। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ভালো করার থেকে অনুমিত কারণেই কঠিন, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আপনি যে মানের বোলারকে মোকাবিলা করবেন বা যেসব মানের ব্যাটসম্যানদের বল করবেন তার থেকে টেস্টের খেলোয়াড়রা অনেক বেশী যোগ্যতাসম্পন্য হবে। তাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় যে, একজন ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণীর ব্যাটিং গড়, টেস্টের ব্যাটিং গড়ের থেকে ভালো হবে।
এই কথাটাই একটু অন্য ভাবে বলি। একজন ব্যাটসম্যান প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যেই গড়ে রান করবেন, টেস্টে তার থেকে কম গড়ে রান করবেন, এটাই স্বাভাবিক, হয়তো সামান্য বেশীও করতে পারেন, কিন্তু অনেক বেশী করবেন না।
বিশ্বাস হচ্ছে না?
আসুন দেখি তামিম ইকবালের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের গড় কত? তামিমের প্রথম শ্রেণীর গড় ৪৩.২৫। টেস্টের গড়? ৩৯.৫৭।
মুশফিকের? প্রথম শ্রেণীতে, ৩৪.৩১। বেশ কম মনে হচ্ছে না? টেস্টে নিশ্চয়ই অনেক ভালো? আসলে, ৩৩.৫৮।
একটু পেছনে ফিরি। আশরাফুল তো ব্যাটিং জিনিয়াস ছিল বলে আমরা সবাই মনে করি। ওনার প্রথম শ্রেণীর গড় ছিল ২৮.৮৫। টেস্টে কি বেশী ছিল তাহলে? ২৪!
আবার বর্তমান দলে ফিরি। আমাদের তামিম এর সঙ্গী ইমরুলের কি অবস্থা? প্রথম শ্রেণীর গড় ৩৫.৪০। টেস্টে ২৮.৬৪।
রিয়াদ তো বাংলাদেশের একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়। টেস্টে একদম এ ভালো করতে পারছে না, গড় মাত্র ৩০.৫১। প্রথম শ্রেণীতে কি সে অনেক ভাল করেছিল? উত্তর হল, না, প্রথম শ্রেণীতে ওনার গড় ৩৩.৯৭।
সাব্বির? প্রথম শ্রেণীতে ৩৪.৭২। টেস্ট খেলল মাত্র ৪ টা, তাও গড়টা বলি - ৩৪.৮৩।
এবার সৌম্যের দিকে টাকাই। প্রথম শ্রেণীতে গড় ২৮.১৬, আরও কম! যেহেতু টেস্ট মাত্র ৩/৪ টা খেলেছে তাই সেটা নিয়ে আর আলোচনা করলাম না। কিন্তু আমি নিশ্চিত, উনি অনেক ভালো খেললেও এটা ২৬ থেকে ৩০ এর আসে পাশে থাকবে।
মমিনুল আর সাকিব এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যাতিক্রম। মমিনুলের প্রথম শ্রেণীর গড় ৪৩, আর টেস্টে ৫১.১৫। মমিনুল আসলে অসাধারণ কিছু ইনিংস খেলেছে, তবে কালক্রমে ওর টেস্ট গড়, প্রথম শ্রেণীর গড়ের কাছাকাছি চলে আসবে। সাকিবের প্রথম শ্রেণীতে ৩৭.৭০, টেস্টে ৪০.৬৭, যদিও টেস্টে বেশী, কিন্তু সেই একই কথা, ব্যবধানটা প্রায় একই রকম।
এবার আসল কোথায় আসি। আমরা ৫ বছর আগের চেয়ে ভালো টেস্ট খেলছি, কারন, আমাদের ৩ জন ব্যাটসম্যানের টেস্টের গড় এখন ৪০ এর কাছাকাছি বা উপরে(তামিম, সাকিব, মমিনুল)। টেস্ট ক্রিকেটে জেতার জন্য অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমাদের আরও ৩ থেকে ৪ টা খেলোয়াড় দরকার যাদের গড় ৪০ এর আশেপাশে থাকতে হবে। আর এটা নিশ্চিত যে, প্রথম শ্রেণীতে ৪০ এর কাছাকাছি যাদের গড় নেই তারা টেস্টেও পারবে না।
এই ফর্মুলাতে এই একাদশ থেকে সৌম্য একেবারেই বাদ পরে যায়, রিয়াদ এবং সাব্বির ও। সাথে মুশফিকও, এটা শুনতে খুবই খারাপ শোনাবে, কারন আমরা ওনাকে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মনে করি, আমিও করি, আর আজকেই উনি দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু আমি পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে নিরুপায়। যাইহোক, তাহলে দেখি যে কোন ৩ জন নিশ্চিত দলে থাকতে পারবেন।
১। তামিম
২। সাকিব
৩। মমিনুল
এবার, জাতীয় দলের প্রথম একাদশে নেই, এরকম কিছু খেলোয়াড়ের দিকে তাকাই।
নাসির? প্রথম শ্রেণীতে ৩৭.৫০, টেস্টে ৩৭.৩৪। হতে পারে, কিন্তু আরও ভাল লাগবে।
নাজমুল হোসেন শান্ত? ৩৫.৬৮, নাহ, আরও ভালো হতে হবে।
লিটন? প্রথম শ্রেণীতে গড় ৫১.৭৫। খুব ভালো।
মোসাদ্দেক? ৬৯.১৯। অসাধারণ! চোখ বন্ধ করেই সুযোগ পেতে পারেন।
তাহলে কি দাঁড়ালো? ব্যাটিং লাইন আপ টা ঠিক করে ফেলি।
১। তামিম
২। ?
৩। মমিনুল
৪। সাকিব
৫। মোসাদ্দেক
৬। লিটন(উইকেটরক্ষক)
৭।?
৮। মিরাজ
৯। বোলার
১০। বোলার
১১। বোলার
তাহলে ২ আর ৭ নাম্বার জায়গাটা ফাঁকা থাকলো। কাকে খেলানো যায় ওখানে?
এমন কোন ওপেনার অথবা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কি আছেন যার প্রথম শ্রেণীর গড় ৪৫ এর উপরে?
৫ অথবা ৬ এ কি আরও ভালো বিকল্প কি আছে?
অথবা অন্য কোনও জায়গায়?
মুশফিক এর পরিসংখ্যানের দিকে না তাকিয়ে কি সে খুব ভালো ব্যাটসম্যান এই ধারণা থেকে তাকে জায়গা দেওয়া যায় আরও ভালো বিকল্প না আসা পর্যন্ত?
(আমি এখানে শুধু টেস্টের কোথা বলছি, সীমিত ওভারের নয়)
|